বেশি বেশি পানি পানের উপকারিতা

পোস্টের টাইটেল দেখে হয়তো বুঝে গেছেন কি সম্পর্কে আজকের এই পোস্ট হতে চলেছে। হ্যাঁ ঠিকি ধরেছেন, বেশি বেশি পানি পানের উপকারিতা সম্পর্কে আজকের এই পোস্টটি-তে আলোচনা করা হয়েছে।

বেশি-বেশি-পানি-পানের-উপকারিতা

আপনি যদি পানি পান পান করতে অনাগ্রহ হয়ে থাকেন তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্যই। আশা করবো এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পুরোটা মনোযোগ সহকারে পড়বেন এাবং যথানিয়মে পানি পান করবেন। চলুন তাহলে বিস্তারিত জানা যাক। 

পানির প্রকৃত বৈশিষ্ট্য

পানি একধরনের রাসায়নিক পদার্থ। পৃথিবীতে বিদ্যমান সম্পূর্ণ জীবজগতের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পানির কোনো বিকল্প নেই। পানি আছে বলেই পৃথিবী নামক এই গ্রহটিতে জীবের অস্তিত্ব টিকি আছে।সমস্ত জীবের বেছে থাকার জন্য পানি অপরিহার্য। বিজ্ঞানীদের মতে, পানি ছাড়া জীবের অস্তিত্ব টিকে থাকা অসম্ভব। ধারণা করা হয় পানিতেই জীবের সৃষ্টি হয়েছে। তাই বহির্বিশ্বে কোনো গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব খোজার আগে সেই গ্রহে আগে পানি অস্তিত্ব আছে কি না সেটা অনুসন্ধান করা হয়। 

কথিত আছে, পানির ওপর নাম হলো জীবন। H2O হলো পানির বৈজ্ঞানিক সংকেত। আর বৈজ্ঞানিক নাম হলো হাইড্রোজেন মনোক্সাইড। দুইটি হাইড্রোজেন পরমাণু ও একটি অক্সিজেন পরমাণুর সমন্বয়ে পানি অনু গঠিত হয়। মূলত পানি তিনটি ভিন্ন ভিন্ন অবস্থা বিদ্যমান।কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থা। এখানে তরল অবস্থাকেই সাধারণ অর্থে পানি হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
বেশি-বেশি-পানি-পানের-উপকারিতা

পৃথিবীর মোট ভূমন্ডলের তিনভাগ পানি আর একভাগ স্থল বা মাটি। ভূপৃষ্ঠের প্রায় ৭০.৯% অংশ জুড়ে জলভাগ বিস্তার করছে।তবে এই বিপুল জলরাশির মাত্র ২.৫% বিশুদ্ধ এবং বাকি ৯৭.৫% হলো সামুদ্রিক, ভূগর্ভস্থ পানি ও বরফ। এই সামান্য পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি দিয়েই মানুষ তার তৃষ্ণা নিবারণ করে থাকে।আবার ভূপৃষ্ঠের এই পানি বাস্পিভবন ও ঘনীভবনের মাধ্যমে বারবার চক্রাকারে ঘুরে।

মানবদেহে পানির প্রয়োজনীয়তা

সকল জীবের বেছে থাকার জন্য পানি অপরিহার্য উপাদান। মানুষের বেঁচে থাকার জন্যও পানির কোনো বিকল্প নেই। মানবদেহের গঠন অনুযায়ী প্রতিটি মানুষের শরীরে শতকরা ৫৫%-৭৮% পানি থাকে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক স্বাভাবিক মানুষের উচিত নিয়মিত এক থেকে সাত লিটার পানি পান করা। তবে দেহের গঠন, পরিশ্রমের ভিন্নতা, তাপমাত্রা ইত্যাদির কারণে অনেক ক্ষেত্রে মানুষের দেহের পানির চাহিদায় ভিন্নতা দেখা যায়। মানবদেহে পানি পানের উপকারিতা ও কিছু গুরুত্ব নিম্নে দেওয়া হলো -

  • বেশি বেশি পানি পানের ফলে খাদ্য হজম হয়।পানি পানের ফলে লালাগ্রন্থি শুকিয়ে যায় না ফলে খাদ্য হজম করতে কোনরকম জটিলতার সমুক্ষিণ হতে হয় না।

  • শরীরে পানির ঘাটতির ফলে শরীরের চামড়া শুকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেক ক্ষেত্রে ত্বকে বৃদ্ধের ন্যায় ভাঁজ দেখা দেয়। তাই এ সমস্যা দূরীকরণে পানি পানের বিকল্প নেই।

  • দীর্ঘ সময় পানি পান করা থেকে বিরত থাকলে মস্তিষ্কের স্পাইনাল কর্ড ক্ষতিগ্রস্থ হয়।তাই মস্তিষ্কের নিরাপত্তায় পানো পান করা জরুরি।

  • আমাদের দেহে পুষ্টি উপাদান সরবরাহ, রক্ত সঞ্চালন ও রক্ত সংবহন এ পানির প্রধান ভূমিকা রয়েছে।

  • দেহের বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনে পানির ভূমিকা অপরিসীম। দেহে সৃষ্ট এসকল নাইট্রোজেন ঘটিত বর্জ্য পদার্থ দেহের বাইরে বের করে দিতে না পারলে দেহে নানা ধরনের রোগের সৃষ্টি হতে পারে। যেমন- ডায়াবেটিস, কিডনি বিকল, বৃক্ক পাথর ইত্যাদি। তাই এসকল সমস্যা দূরীকরণে পানির বিকল্প নেই।

  • পানি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। পর্যাপ্ত পানি না পান করলে দেহে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। আর পানিশূন্যতার ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।ফলে দেহে আরও বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ ঘটতে পারে। তাই পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।

  • শরীরকে শীতল রাখতে পানির কোনো বিকল্প নেই। আমাদের দেশে বিশেষত গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে অল্পতেই মানুষের শরীরের পানি ঘাম আকারে বাইরে বের হয়ে যায় এবং শরীর প্রচুর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এসময় পানির কোনো বিকল্প নেই।

বিশুদ্ধ খাবার পানি

পর্যাপ্ত খাবার পানি পান করা প্রত্যেক মানুষের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে পানি পানের ফলে সৃষ্টি হতে পারে নানা ধরনের জটিলতা। পানিদূষণের ফলে যেসকল রোগের সৃষ্টি হয় তাদেরকে পানিবাহিত রোগ বলে। যেমন- ডায়রিয়া, কলেরা ইত্যাদি। আমাদের এই ভূমন্ডলে বিশুদ্ধ পানির পরিমাণ খুবই সীমিত।তবে কিছু সার্থানলভী ব্যক্তিবর্গের নিজস্ব চাহিদা মেটানোর জন্য তারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পানি দূষিত করছে। পানিতে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত হয়ে পানি দূষিত হচ্ছে। 

আর এই নদী নলার দূষিত পানি ভূগর্ভস্থ বিশুদ্ধ পানির সাথে মিশ্রিত হচ্ছে। এর ফলে নানা ধরনের রোগের উপক্রম দেখা যাচ্ছে। তাই সকলের উচিত আগে বিশুদ্ধ পানি সনাক্ত করা। তবে অনেক ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ পানি সনাক্ত করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই বিশেষ ধরনের কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে পানি বিশুদ্ধ করে পান করতে হবে। পানি বিশুদ্ধ করে পান করলে দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে। যে প্রক্রিয়ায় পানি বিশুদ্ধ করা হয় তাকে পানি বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া বলা হয়।

পানি বিশুদ্ধকরণ এর কিছু নমুনা

সঠিক নিয়মে পানি ফুটিয়ে পানি বিশুদ্ধকরণ করা সম্ভব। এ প্রক্রিয়ায় ৬০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় পানিকে পাঁচ থেকে পঁচিশ মিনিট পর্যন্ত ফুটানো হয়। পানি ফুটানোর ফলে এতে বিদ্যমান সকল জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়। পানিকে ফুটানোর পর উক্ত পানিকে ভালোভাবে ছেকে পরিষ্কার পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে। তবে ফুটানো পানি বেশিদিন থাকলে তাতে আবারো জীবাণুর আক্রমণ ঘটতে পারে।
বেশি-বেশি-পানি-পানের-উপকারিতা
  • বর্তমান আধুনিক যুগে বাজারে বিভিন্ন ধরনের ওয়াটার পিউরিফায়ার তথা ফিল্টার পাওয়া যায় এইসব ফিল্টারে পানি বিশুদ্ধ করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার করা হয়। তাই পানি বিশুদ্ধকরণ জন্য ফিল্টার ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • পটাস বা ফিটকিরি ব্যবহার করে পানি বিশুদ্ধ করা যায়। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানিতে পরিমাণ মতো ব্লিচিং মিশিয়ে দুই থেকে তিন ঘণ্টা রেখে দিলে পানি বিশুদ্ধ হয়ে যাবে এবং তলানি ফেলে দিয়ে উপরের পানি সরিয়ে নিতে হবে।
  • প্রতি লিটার পানিতে দুই পার্সেন্ট আয়োডিন মিশিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিলে পানি বিশুদ্ধকরণ সম্ভব।
প্রত্যেক জীবের বেছে থাকার জন্য পানির বিকল্প নেই। মানুষের কিছু অমানবিক কার্যকলাপ ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে আমাদের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। আবার পানি দূষণের ফলে খাবার পানির সাথেও উক্ত দূষিত পানি মিশ্রিত হয়ে খাবার পানির দূষণ ঘটছে। মানুষ সহ অন্যান্য সকল জীবের জন্য পানি হলো বেঁচে থাকার নিয়ামক। পানি ছাড়া এই ভূ-মন্ডলের কোনো জীবের অস্তিত্বই টিকে রাখা সম্ভব না। তাই পানির সুস্থ ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্মপূর্ণ। তাই পানির সুষ্ঠ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

মন্তব্য

পরিশেষে বলা যায়, আজকের এই পোস্টটি হতে পারে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপনি হয়তো এই পোস্টটি পড়ার পরে সতর্ক হলে আমাদের স্বার্থকতা সাথে আপনসার উপকার। আর এই পোস্টটি পড়ার পরেও আপনি জানার পরেও যদি না মানেন তাহলে এতে আপনার জন্যই ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই আসুন সাবধান হই। 

পরিশেষে সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি যারা কষ্ট করে এই পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। এইরকম পোস্ট আরো পেতে আমাদের সাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। আপনি কি ধরনের কনটেন্ট চাচ্ছেন সেইটা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। কোন তথ্যগত ভুল থাকলে তা ক্ষমা করে দিবেন এবং কমেন্ট এর মাধ্যমে সংশোধন করার সুযোগ করে দিবেন, আসসালামু আলাইকুম। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url